আমাদের দর্শনগত ভুলের কারণে বিগত একশত বছরেও হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসেনি। সাধারণত একটা জাতি গড়বার জন্য প্রথম উদ্যোগ নিতে হয়, বাচ্চাদের শিক্ষায়। একটা জাতি কে গড়বার জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে সমস্যা হলো আজ পর্যন্ত একটাও ইসলামি প্রতিষ্ঠান দেখানো সম্ভব নয় যেখানে পরিপূর্ণ ইসলামি জ্ঞানের পাঠদান করা হয়। এ এক আজব সমস্যা মুসলিম বাচ্চাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তৈরি করতে ব্যার্থ হয়েছে, হচ্ছে। সমাধান করার চেষ্টা অনেকেই করেছে কিন্তু পরিপূর্ণ সমাধান কেন যেন এখনো দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। কেউ একাধারে সব বাচ্চাকে বিজ্ঞান শিখানো নিয়ে ব্যাস্ত ভালো ফকিহ্, মুহাদ্দিস ও আকাইদের বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে না। কেউ বা আদব, ফিলোসোফি ও ইতিহাস নিয়ে ব্যাস্ত ভালো ফকিহ্, মুহাদ্দিস ও আকাইদের বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে না। আবার যারা ফিকাহ্, হাদিস ও আকাইদ নিয়ে সময় দিচ্ছে তারাও খণ্ডিত ফিকাহ্, হাদিস ও আকাইদ নিয়ে পরে আছে। অথবা শুধু হিফযে সীমিত করে ফেলেছে। বর্তমান জামানার সাথে মেলানোর কোন ইচ্ছে, শক্তি, যোগ্যতা কোনটাই তাদের নেই।
এই হিসেবে মুসলিমদের কয়েকটি ধারা পাওয়া যায়
১/ ইলমি ধারা
ক. আল আজহার। আশআরি, শাফেয়ী
খ. মদিনা বা উম্মুল কুরা। সালাফি, আসারি
গ. দেওবন্দ। মাতুরিদি, হানাফি
২/ বুদ্ধিবৃত্তিক ইসলামি ধারা
ক. আলিগড়। স্যাকুলার দর্শন ইসলামাইজেশন করার ধারা
খ. নদওয়া। প্রথম দিকে ইসলামি দর্শন দিয়ে স্যাকুলার দার্শন কে আঘাত করলেও বর্তমানে আলিগড় আর নদওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
৩/ বিজ্ঞান ভিত্তিক স্কুলিং ধারা
ক. ইমাম হাতেপ স্কুল তুরস্ক। সাধারণ ইসলামি শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিমদের কে বিজ্ঞানে পারদর্শী করে গড়ে তোলা।
খ. আমিরিকা ও ইউরোপের ইসলামিক স্কুল।
এইযে উপরে মুসলিম শিক্ষা ব্যাবস্থার তিনটি ধারা দেখলেন এগুলোর প্রথম ধারাটাই মূলত ইসলাম কে যতটুকু সম্ভব টিকে রেখেছে। বাট ইসলাম কে উত্তরণের কোন চেষ্টা তারা করেনি। অথচ ইসলামের প্রথম যুগে ইলমি লোকগুলো ই রাষ্ট্র, সমাজ থেকে শুরু করে সবগুলো বিষয় পরিচালনা করেছে। তারমানে ইসলামে সবগুলোই রয়েছে কিন্তু বর্তমান ফিকাহ্ সে পর্যন্ত আমাদের কে কেন নিয়ে যাচ্ছে না? কারণ আমরা ফিকাহ্ সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা বিষয় ইসলামি আকিদা আধুনিক সময়ের ফিতনগুলোর সাথে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে আধুনিক কুফর ও শিরিক চিহ্নিত করা। অথচ আমরা চিহ্নিত করি কাররামি কারা, মুরজিয়া কারা ইত্যাদি। আমি বলছিনা ওগুলো পড়বেন না। বরং আমি বলছি ওগুলো ও পড়বেন আবার বর্তমান কুফর ও শিরকি মতবাদের খন্ডনগুলো ও পড়বেন।
ইলমি ধারার লোকজন বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান আহরন করে না। তারা দুনিয়া কে না বুঝে শুধুমাত্র দ্বীন পালন করতে চায়। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে নিজের জ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি করতে হবে। আধুনিক সমস্যার শরয়ী সমাধান বের করতে হবে। আধুনিক শিরিক ও কুফর নির্ণয় করতে হবে। জনগণ কে আধুনিক ফিতনা থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য নতুন অনুষদ রাখতে হবে যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও তার খন্ডন নিয়ে আলোচনা হবে। পর্যালোচনা করে ভালো জিনিস নিতে হবে, মন্দ জিনিস পরিহার করতে হবে।
একদল যোগ্য, ফকিহ্, মুহাদ্দিস ও আকাইদ বিশারদ দরকার। পাশাপাশি তাদের আধুনিক নলেজ দরকার। কিন্তু তাদের প্রযুক্তিতে জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং আলাদা কিছু মুসলিম ছেলেকে এজন্য বাছাই করতে হবে। যারা ফরজ পরিমাণ ইসলামি জ্ঞান আহরনের পরে পরিপূর্ণ সময় ব্যায় করবে বিজ্ঞানে। তারা মুসলিম সভ্যতা কে পূণরায় বিনির্মানে তাদের বিজ্ঞান কে কাজে লাগাবে।
তাহলে আমরা ফলাফল পেলাম!
১/ ইলমি ধারা অব্যাহত রাখতে হবে, তবে পরিধি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আধুনিক নলেজ থাকতে হবে।
ক. ফিকাহ। ফিকহুল খিলাফাহ্, ফিকহুল কাজা, ফিকহুস সিয়াসাহ্, ফিকহুত তাজাম্মুআত, ফিকহুল ইকতেসাদ। ইত্যাদি
খ. আকিদা। তাওহীদ, কুফর, শিরিক, আধুনিক রিদ্দাহ্, আধুনিক মতবাদের খণ্ডন।
গ. ইতিহাস।
ঘ. আরবি ভাষা।
ঙ.লোজিক ও ফিলোসোফি।
চ. হাদিস।
ছ. তাফসির।
জ. কিরাআত।
এই বিষয়গুলোই তবে পরিধি ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। আমরা এসব বিষয়ের পরিধি ব্যাপক না করে মনে করি ইংরেজি, কম্পিউটার, বিজ্ঞান শিখলেই বুঝি ইসলাম পুনরুদ্ধার করতে পারবো। না তা অসম্ভব! বরং বিষয় এগুলোই থাকবে বাদবাকি এগুলো ব্যাপক উন্নয়ন দরকার। বিশেষ করে ফিকাহ্ কে ব্যাক্তিগত আমলে সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থ, বিশ্ব সবগুলো বিষয়ের ফিকাহ্ পড়ানো দরকার। প্রয়োজনে ইফতার ১০ টা সাবজেক্ট হতে পারে। এবং আকিদায় আধুনিক কুফরি ও ভ্রান্ত মতবাদ খন্ডন করতে হবে।
২/ সাধারণ মুসলিম বাচ্চা যারা আলেম হবে না তাদের জন্য ইসলামিক স্কুল তৈরি করা। যাতে ফারিদাহ্ ইলম অর্জন করে বিভিন্ন পেশাদারি পড়াশোনা করতে পারে।